আইজ্যাক লিটন (২০২২)বাংলা মুভি রিভিউ ডাউনলোড /Issac Liton Review

ওয়েব সিরিজ: আইজ্যাক লিটন
কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং ডিরেক্টর: আশরাফুজ্জামান
রেটিং পয়েন্ট: ৯.৫/১০
আইজ্যাক নিউটন নামনটা বাবা রেখেছিলেন কিন্তু নাম নিয়ে বন্ধুরা মজা করতো করতে "আইজ্যাক লিটন" নামটিই স্থায়ী হয়ে গেল। পূর্ব ইতিহাস বলে আইজ্যাক লিটনের পূর্ব পুরুষরা পাগল হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। লিটনের বাবা একদিন স্বপ্নে মহা বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটনকে স্বপ্নে দেখলেন তারপর থেকে তিনি আপেল গাছ লাগিয়ে তার নিচে দিনরাত বসে থাকতেন এবং সে অবস্থায় একদিন মৃত্যুবরণ করেন। লিটনকে নিয়ে মা দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। ভাই এর পরামর্শে লিটনের মা লিটনকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান।
লিটন মামার কাছে বড় হয়। এক পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতে থাকাকালীন শিক্ষক আইজ্যাক নিউটনের সূত্রের ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করাই লিটন আপেল নিক্ষেপ করে শিক্ষকের নাক ফেটে দেয়; যার ফলে সে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রত্ব হারায়। কিন্তু পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রত্ব বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলেও এবং শিক্ষকদের শত অনুরোধেও লিটন আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখায় ফিরে আসেনি। আইজ্যাক লিটন ছিলো অসামান্য প্রতিভার অধিকারী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম থেকে ৩য় বর্ষ পর্যন্তু রেকর্ড সংখ্যা নাম্বার কেরি করে।
তবে লিটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে না গেলেও সে এক অদ্ভুত কান্ড করতে শুরু করে। মামার বাসার ছাদে আপেল গাছ লাগিয়ে বাবার মতো সেখানে রাতদিন বসে থাকতে শুরু করে। একটা ল্যাবরেটরি তৈরি করে। সেখানে আজব আজব এক্সপেরিমেন্টাল পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যায়। দেশে-বিদেশে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে অনেক সাংবাদিক, গবেষক লিটনের কাছে আসে সাক্ষাৎকার নিতে; তাদের প্রত্যেকের সাথে লিটন কোন না কোন উদ্ভট ঘটনা ঘটায়। এতে লিটনকে জেলেও যেতে হয় মাঝে মাঝে।
একদিন লিটনের সাথে চন্দ্রাবতী নামে এক মেয়ে দেখা করতে আসলো পাগলদের নিয়ে গবেষণা করবে বলে। সে লিটনের বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে থাকে। তবে এই চন্দ্রা'ই পুরো অয়েব সিরিজের সাসপেন্স এবং থ্রিলের প্রধান মাস্টার মাইন্ড, আর একজন আছেন তিনি লিটনের সহকারী। অয়েব সিরিজের শেষে যার চরিত্রায়ন এবং রহস্যময়তা আমার মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছে।
গল্পের শেষ পর্যায়ে এসে লিটনের গবেষণা কর্মের জন্য লিটন কে হত্যা করা হয়ে। যে কারণ কে উদ্দেশ্য করে হত্যাটা করা হয়। সেই কারণই মিথ্যা প্রতীয়মান হয়।
যাইহোক গল্পের যে এমন তেজদীপ্ততা তা আমি আগে কখনো কোন অয়েব সিরিজে দেখিনি।
অয়েব সিরিজের প্রতিটা পর্বেই কমেডি, সাসপেন্সে ভরা। কোন কোন পর্বে থ্রিলিং দেখে চমকে উঠেছি।
প্রথম পর্ব শুরু সময়ে মনে হয়েছে এটা হয়তো একটানা দেখা সম্ভব না। কিন্তু ১০ মিনিট পর থেকে যা শুরু হলো, আমি এক সেকেন্ডের জন্য চোখ এদিক সেদিক করতে পারিনি। টানা ৭ টি পর্বই দেখে শেষ করলাম।
আমার কাছে মনে হয়েছে মোশারফ করিম এই অয়েব সিরিজে তার অভিনয় দিয়ে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে গেছেন। আমি মোশারফ করিমকে এমন রূপে পাবো তা আশা করিনি। কিন্তু আমি এখানে তাঁর চরিত্রায়ণ দেখে মুগ্ধ। মাজনুন মিজান, নয়ন, স্পর্শীয়া, নাঈম রাজ সহ সবাই নিখুঁত অভিনয় করেছেন।
আর একটি কথা জোর দিয়ে না বললেই নয় "আইজ্যাক লিটনের" প্রধান নির্যাস হলো এর "গল্প"। যার স্রষ্টা আশরাফুজ্জান। তিনি বাংলাদেশের বর্তমান যুগান্তকারী সম্ভাবনা। তাঁকে আমি সেলুট জানাই এমন অসাধারণ গল্প ও মেকিং এর জন্য।
আশা করি এই অয়েব সিরিজটি আমার মতো অনেকরই ভালো লাগবে